বিভাবরী
জ্যোৎস্না
ব্দ্রুল
জোসনার ধূসর আলো
অনেক মানুষই আছেন যাদের ভেতরে একটা অন্ধকার দিক থাকে, যেটা তিনি প্রকাশ করেন না বলে সেটা প্রায় সবার কাছেই অজানা, অদেখা রয়ে যায়। সিনেমা বা উপন্যাসের ‘টিপিক্যাল’ ভিলেন চরিত্রের মতো না যে, প্রথম থেকে শেষ অবধি তিনি খল চরিত্র নিয়েই থাকেন, তবে কোন একসময় হয়তো তার চরিত্রের অন্ধকার দিকটা প্রকাশ পেয়ে যায়। গ্রাম্য পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসে একটা মিষ্টি প্রেমের গল্পের পাশাপাশি তেমনই একজন ক্ষমতাধর মানুষের চরিত্রের বিভিন্ন দিক ক্রমান্বয়ে উন্মোচন করা হয়েছে।
গ্রামের চেয়ারম্যানের আদরের মেয়ের তারই লজিং মাস্টারের সাথে একটা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠা আপাতঃ দৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও অবাস্তব নয়। কিন্তু বাস্তবে এধরণের সম্পর্কের পরিণতি সাধারণতঃ অবশেষে সফল রূপ পায় না, এই উপন্যাসেও ঘটনাটা সেরকম পরিণতির দিয়েই গড়িয়ে যায়। এখানে মূল চরিত্র লজিং মাস্টার সেলিম, চেয়ারম্যান সাহেব ও তার মেয়ে আমিনার চরিত্রের বিশদ চরিত্রায়ণের পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্রের কিছু কুশলী, যেমন জয়নালের মতো একজন সাধারণ মানুষের প্রবল প্রতিকূলতার মাঝেও তার প্রচন্ড আত্মসন্মানবোধ, সফুরার জীবনের কষ্ট, মাওলানা সাহেবের বিনয়ী কিন্তু দৃঢ় উক্তি, খালেকের সরলতার পাশাপাশি অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, রাহেলার ব্যক্তিত্ব, মফিজ চেয়ারম্যানের সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, শাহিনার পরিমিতিবোধ ইত্যাদি, প্রায় প্রতিটা চরিত্রের মাধ্যমেই গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবন প্রকাশ পেয়েছে, তাদের দৈনন্দিন জীবনের দূঃখ, কষ্ট, হাসি, আনন্দ, ভালোবাসার বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। একই সাথে কিসমত মিয়ার মত কূটিল চরিত্রের মাধ্যমে গ্রামের হাতেগোনা কিছু খারাপ মানুষকেও চিত্রায়িত করা হয়েছে।
গ্রামীণ পটভূমিতে লেখা হলেও এই উপন্যাসের গল্পে পাঠক তাদের অতি পরিচিত মানুষগুলোকেই খুঁজে পাবেন এবং এসব চরিত্রগুলোর মাঝে একসময় একাত্ম হয়ে যাবেন।